ভোলার মনপুরা উপজেলার বিচ্ছিন্ন কাজীরচরে চাষাবাদকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। গুরুতর আহতদের মধ্যে পুলিশের এসআই সাগরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভোলায় ও অপর গুরুতর আহত কৃষক মো. বাহারকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। বাকিদের মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মনপুরা উপজেলার মনপুরা ইউনিয়নের উত্তরে বিচ্ছিন্ন কাজীরচরে কৃষকরা চাষাবাদ করতে গেলে এই হামলার ঘটনা ঘটে। পরে বিকেল ৫টার দিকে আহত পুলিশ সদস্য ও কৃষকদের উদ্ধার করে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হামলায় আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন মনপুরা থানার পরিদর্শক তদন্ত শংকর তালুকদার, এসআই লুৎফুর, এসআই সাগর, কনস্টেবল জাহাঙ্গীর, কনস্টেবল শাহীন, কনস্টেবল নাইম ও কনস্টেবল সাইদুল। হামলায় আহত কৃষকরা হলেন মো. বাহার, মো. ফরিদ, জাবেদ ফরাজী, নুর ইসলাম ফরাজী, ছোট মনির ফরাজী, খোকন মেলেটারী, রাসেল ফরাজী, নুরনবী ফরাজী, মতিন ফরাজী, কাসেম, নাসির, মাইনুদ্দিন ও আলাউদ্দিন।
আহত কৃষকদের সবার বাড়ি উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।
আহত কৃষক জাবেদ ফরাজী, ফরিদ ও বাহারসহ অন্যান্যরা জানান, বিচ্ছিন্ন কাজীর চরে চাষাবাদ করতে গেলে জমির একর প্রতি ৬ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে স্থানীয় স্বপন ডাকাত। তা নাহলে চরে চাষাবাদ করতে দেবে না বলে হুমকি দেন তিনি। তখন কাজীরচরে কৃষকদের পক্ষে মাইনুদ্দিন লিখিতভাবে ভোলা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে আজ বুধবার সকালে মনপুরা থানার পুলিশসহ কৃষকরা কাজীরচরে চাষাবাদ করতে গেলে স্বপন ডাকাতের নেতৃত্বে চরকলাতলী ও হাতিয়ার লাঠিয়াল বাহিনী কৃষক ও পুলিশের ওপর হামলায় চালায়। এতে পুলিশসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। মনপুরা ইউনিয়নের সাবেক এক জনপ্রতিনিধি প্রত্যক্ষ ইন্ধনে এ হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন কৃষকরা।
মনপুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমানত উল্লা আলমগীর জানান, সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিনের প্রত্যক্ষ মদদে স্বপন ডাকাতের নেতৃত্বে লাঠিয়াল বাহিনী বন্দোবস্তীর জমির কৃষকসহ পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ওই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্বপন ডাকাত কাজীরচরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। স্বপন ডাকাতের ভয়ে কৃষকরা চরে চাষাবাদ করতে পারছে না।
মনপুরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন হাওলাদার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এ ঘটনার সাথে তিনি জড়িত নন। তাকে রাজনৈতিকভাবে কোনঠাসা করার জন্য প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটাচ্ছে।
তিনি পাল্টা অভিযোগ করে জানান, স্বপন ডাকাত সরকারি আবাসনে থাকে। বর্তমান চেয়ারম্যান স্বপন ডাকাতকে আবাসনে ঘর দিয়েছে। বরং স্বপন ডাকাত বর্তমান আলমগীর চেয়ারম্যানের লোক।
মনপুরা থানার ওসি মো. জহিরুল ইসলাম জানান, কাজীরচরে কৃষকদেরকে চরে চাষাবাদ করতে দিচ্ছে না পুলিশের তালিকাভুক্ত ডাকাত স্বপন। এ রকম একটি লিখিত অভিযোগ ভোলা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে করে স্থানীয় কৃষক মাইনুদ্দিন। পরে পুলিশ সুপারের নির্দেশে পুলিশ কৃষকদের নিয়ে ঘটনার তদন্ত করতে আজ বুধবার কাজীরচরে যায়। পরে এক পর্যায়ে কাজীরচরে স্বপন ডাকাত ও সাধারণ কৃষকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। পরে সেটি হামলায় রূপ নিলে পুলিশ দুই পক্ষকে শান্ত করতে ১২ রাউন্ড ফাকা গুলি ছোড়ে। এ হামলায় সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। এবং কৃষকদের মধ্য থেকে অনেকে আহত হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে একটি পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। রাত ৮টা পর্যন্ত কৃষকদের পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ করা হয়নি।