বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছিল। কিন্তু জ্বালানি তেল, কয়লা বা গ্যাসের অভাব সারা বিশ্বব্যাপী, কেনাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। এরপরও সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। কাতার ও ওমানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। কয়লা কেনার জন্য ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আবার চালু করা যায়।
জাতীয় সংসদে আজ রোববার শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। সরকারি দলের সংসদ সদস্য আফসারুল আমীনের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব তোলা হয়। পরে তা সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়।
বৈশ্বিক সংকট আরও বাড়তে পারে আশঙ্কা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজ স্বাধীনতার সুফল মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছে। মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে। যদিও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা–পাল্টা নিষেধাজ্ঞা, বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি, জ্বালানি তেলের অভাব; যার জন্য এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে কিন্তু জ্বালানির অভাব হচ্ছে। সেখানে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করা হচ্ছে। খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। উন্নত দেশেও বহু মানুষ চাকরি হারাচ্ছে। এমন একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সারা বিশ্বব্যাপী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি না আর কখনো এ রকম পরিস্থিতি হয়েছিল কি না। হয়তো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে তো দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল।’
সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের অতিমারি, এরপর ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সমগ্র বিশ্বে যে খাদ্যসংকট, মুদ্রাস্ফীতি, পরিচালনা ও পরিবহন ব্যয়, বিদ্যুতের ঘাটতি—এটা প্রত্যেকটি মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে। বাংলাদেশে সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে।
বিদ্যুৎ ব্যবহারসহ সবকিছুতে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সব জিনিস ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে। খাদ্য উৎপাদনও বাড়াতে হবে। চেষ্টা করে যেতে হবে। বিশ্বের এই অস্বাভাবিক পরিস্থিতি আর কত দিন চলবে তা কেউ বলতে পারে না। হয়তো বিশ্ব পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। তবে দেশের মানুষের সুরক্ষার জন্য, তাদের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য যা যা করণীয়, তা সরকার করে যাচ্ছে।
আফসারুল আমীনকে স্মরণ করে সরকারপ্রধান বলেন, আফসারুল আমীন ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রতিটি সংগ্রামে তিনি ভূমিকা রেখেছেন। নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। দলের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা ও সততা ছিল অতুলনীয়। তিনি মন্ত্রী হিসেবেও অত্যন্ত সাফল্য দেখিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা সব সময়ই দুর্গত মানুষের সেবা করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে মানুষ মারা গেছে। তৎকালীন বিএনপি সরকার জানেইনি যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে। সবার আগে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরা ছুটে যান।
শোক প্রস্তাবের ওপর অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, ওয়াসিকা আয়শা খান, মোতাহার হোসেন এবং জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক ও মসিউর রহমান।