আয়কর রিটার্ন দাখিলের আইনি বাধ্যবাধকতা আছে, এমন করদাতাদের আয় করযোগ্য না হলেও কমপক্ষে দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে। প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে এমন একটি প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম (বাজেট) অধিবেশন শুরুর পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমোদনক্রমে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী যে এমন একটি প্রস্তাব আনতে যাচ্ছেন, তা তার বাজেট ঘোষণার আগেই কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এ খবরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া এসেছে সর্বক্ষেত্র থেকে। বিশেষত অর্থনীতিবিদরা এভাবে করারোপ না করতে সরকারকে পরামর্শ দেন।
তাদের যুক্তি, কোনো ব্যক্তির আয় করমুক্ত আয়সীমায় উন্নীত বা অতিক্রম না করলে তার ওপর বাধ্যতামূলক করারোপ করা শুধু ‘অন্যায্য’ নয়, অন্যায়ও বটে। তবে সবার সমালোচনা ও পরামর্শ অগ্রাহ্য করে শেষ পর্যন্ত এ প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিদ্যমান আয়কর আইনে যেসব ব্যক্তির কর আয় করমুক্ত আয় সীমা অতিক্রম করবে, তাদের আয়কর রিটার্ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এর বাইরে, কিছু ক্ষেত্রে বার্ষিক আয় করমুক্ত সীমার মধ্যে থাকলেও রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
বার্ষিক আয় করমুক্ত আয়সীমার নিচে থাকলেও যাদের রিটার্ন জমা দিতে হয়, তারা হলেন- আয়বর্ষের পূর্ববর্তী তিন বছরের যেকোনো বছর করদাতার কর নির্ধারণ বা তার আয় করযোগ্য হয়ে থাকলে বা কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হলে বা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক হলে বা সরকার, কেউ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা করপোরেশনের কর্মচারী হয়ে ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশি মূল বেতন পেলে বা কোনো ব্যবসায় বা পেশায় নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদে বেতনভোগী কর্মী হলে।
এছাড়া কর অব্যাহতিপ্রাপ্ত বা হ্রাসকৃত হারে করযোগ্য আয় থাকলে বা মোটরযানের মালিক হলে বা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা বা কোনো পেশা পরিচালনা করলে বা মূল সংযোজন করে আইনের অধীনে নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ থাকলে বা চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার ও সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থায় নিবন্ধিত হলে বা আয়কর পেশাজীবী হিসেবে এনবিআরের নিবন্ধিত হলে বা কোনো বণিক বা শিল্পবিষয়ক চেম্বার, ব্যবসায়িক সংগঠন বা সংস্থার সদস্য হলে বা কোনো পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনের কোনো পদে বা সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হলে বা সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, স্থানীয় সরকারের কোনো টেন্ডারে অংশ নিলে বা কোনো কোম্পানির, গ্রুপ অব কোম্পানিজের পরিচালক হলে বা মোটরযান, জায়গা, বাসস্থান বা অন্যান্য সম্পদ সরবরাহ করে কোনো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিলে বা লাইসেন্সধারী অস্ত্রের মালিক হলে আয় কর রিটার্ন জমার বাধ্যবাধকতা আছে।
এর বাইরে গত বছর সরকারি বা বেসরকারি কিছু সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ উপস্থাপন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। যেমন- কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ঋণ নিলে বা ক্রেডিট কার্ড পেতে ও বহাল রাখতে বা ১০ লাখ টাকার বেশি ক্রেডিট ব্যালান্সসহ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে ও বহাল রাখতে বা পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র বা পোষ্ট অফিস সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট খুলতে বা আমদানি-রপ্তানির নিবন্ধন সনদ নিতে বা বহাল রাখতে বা সমবায় সমিতির নিবন্ধন নিতে, ১০ লাখ টাকার বেশি মূল্যে জমি বা ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি বা হস্তান্তর করতে বা মুসলিম আইনে বিয়ে নিবন্ধনকারী কাজির নিবন্ধন নিতে ও বহাল রাখতে বা ড্রাগ, ফায়ার, বিএসটিআই লাইসেন্স বা পরিবেশ ছাড়পত্র পেতে ও নবায়নে বা বাণিজ্যিক গ্যাসের সংযোগ নিতে ও সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাসের সংযোগ নিতে রিটার্ন দাখিল করতে হয়। এমন আরও বেশকিছু সেবা গ্রহণে আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় মোট আয় করযোগ্য না হলেও কমপক্ষে দুই হাজার টাকা কর দিতে হবে।