ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, যারা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি নিয়ে তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মানুষ ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিকে সহযোগিতা করতে এ ভিসানীতি ঘোষণা করা হয়েছে। কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, বাংলাদেশের সব মানুষের চাওয়াই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর এডওয়ার্ড এম কেনেডি সেন্টারে (ইএমকে) ‘বন্ধুত্বের শেকড় : যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
ঢাকার মার্কিন দূতাবাস এ আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ডক্টর শাম্মী আহমেদ। ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম তার বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের আবারও ফেরত চান।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের পর আগামী নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়ে জানতে চাইলে পিটার হাস বলেন, সব বাংলাদেশি যা চায়, যুক্তরাষ্ট্রেরও একই চাওয়া। সেটি হলো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিশ্রুতি পরিষ্কার করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্যরা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি পরিষ্কার করেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশি যাদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে, তারাও একই মতপ্রকাশ করেছেন। এখানে কোনো দ্বিমত নেই।
নতুন ভিসানীতির কারণ সম্পর্কে পিটার হাস বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন যা বলেছেন তা বাংলাদেশের মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিকে সহযোগিতা করার জন্য। আমরা আমাদের পন্থায় ভিসানীতি ব্যবহার করেছি।
নতুন ভিসানীতি সাধারণ মানুষের ওপরও ব্যবহার হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধা দিলে ভিসানীতি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ওপর ব্যবহার করা হবে। তবে যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে থাকবে তাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বর্তমান সম্পর্কের চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, সম্পর্কের চ্যালেঞ্জগুলোর পরিবর্তে আমি ইতিবাচক দিকগুলো দেখতে চাই। এ ছবির প্রদর্শনী আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্কের প্রতিচ্ছবি। বর্তমানে বাণিজ্য, নিরাপত্তা, মানুষে মানুষে যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবায় আমাদের বেশ শক্তিশালী অংশীদারত্ব রয়েছে। বর্তমানে আমরা আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছি।
প্রদর্শনীতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে ক্রমপ্রসরমান যাত্রার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন পথরেখা তুলে ধরা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বকে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ প্রদর্শনীর আয়োজন। এই আলোকচিত্র প্রদর্শনীর জন্য প্রায় দুই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক সংস্থা মেরিডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের সঙ্গে বিশেষ সহযোগিতা কার্যক্রম শুরু হয়।
ছবিগুলোতে বাংলাদেশের স্বাধীনতারও আগে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত শিল্পী, বিদ্যার্থী, স্থপতি, ডাক্তার ও উদ্যোক্তাসহ প্রথম দিকের অভিবাসীদের দেখা যাবে। অন্যদিকে রয়েছে এমন সব ছবি যেখানে চিত্রিত হয়েছে কীভাবে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে দুটি দেশ ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও প্রবাসী সম্প্রদায়, সহায়তা ও অবকাঠামো এবং কূটনৈতিক সহযোগিতায় সম্পৃক্ত রয়েছে।
১৯৭৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুক্তরাষ্ট্র সফরের ঐতিহাসিক ছবি এখানে আছে। এটাই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের প্রথম সাক্ষাৎ।