জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মা রহিমা বেগমকে আত্মগোপনে রেখেছিলেন মরিয়ম মান্নান। এরপর অপহরণের নাটক সাজিয়েছিলেন তিনি। এমনটাই উঠে এসেছে রহিমা বেগম অপহরণ মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে। আজ সোমবার সকালে আদালতে ওই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
প্রতিবেদনে মরিয়ম মান্নান, তাঁর মা রহিমা বেগম ও মামলার বাদী ছোট বোন আদুরী আক্তারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে ওই মামলায় ফাঁসানো আসামিদের। আজ দুপুর ১২টার দিকে খুলনা পিবিআই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা জানিয়েছেন খুলনা পিবিআই এর পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমোদিত হওয়ার পর আজ সকালে আদালতে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। নিয়মানুযায়ী বাদীকে ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ব্যাপারে জানানো হয়েছে। পরবর্তী সময় তা লিখিত আকারেও জানানো হবে। বাদী চাইলে আদালতে জমা দেওয়া ওই প্রতিবেদনের ব্যাপারে নারাজি দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবেন। তিনি বলেন, মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগম যে রাতে নিখোঁজ হয়েছিলেন, সেদিন বিকেলে মাকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান। এর ২০ থেকে ২৫ দিন আগে ঢাকায় গিয়ে মরিয়ম মান্নানের বাড়িতে কয়েক দিন থেকেও এসেছিলেন রহিমা বেগম। পুলিশের তদন্তে এসব কথা উঠে এসেছে।
তদন্তকারী কর্মকর্তার ধারণা, বেশ আগে থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে রহিমা বেগমের নিখোঁজের নাটক সাজিয়েছিলেন মরিয়ম মান্নান। মূলত জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে ওই পরিকল্পনা করা হয়। তবে ওই পরিকল্পনার মধ্যে তাঁর ভাই ও অন্য বোনরা ছিলেন না। ওই ঘটনার আগেও রহিমা বেগম বহুবার কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে আবার ফিরে আসেন। এসব ঘটনা পরিবারের সদস্যরা জানতেন। তবে ওই ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত।
২০২২ সালের ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনার দৌলতপুরের মহেশ্বরপাশার বণিকপাড়া থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হন বলে অভিযোগ করেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। ওই দিন দিবাগত রাত দুইটার দিকে খুলনা নগরের দৌলতপুর থানায় মায়ের অপহরণের অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ আল সাদী। রহিমা বেগমকে অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে পর দিন ওই থানায় মামলা করেন রহিমা বেগমের মেয়ে আদুরী আক্তার।মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাঁদের প্রতিবেশী মঈন উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম, মোহাম্মদ জুয়েল ও হেলাল শরীফের নাম উল্লেখ করা হয়। ওই সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। বর্তমানে তাঁরা জামিনে রয়েছেন।
ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে অক্ষত ও স্বাভাবিক অবস্থায় রহিমা বেগমকে উদ্ধার করে পুলিশ। বর্তমানে রহিমা বেগম তাঁর মেয়ে আদুরী আক্তারের জিম্মায় খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।
পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান বলেন, জমি নিয়ে মরিয়ম মান্নানদের সঙ্গে প্রতিবেশীদের ঝামেলা চলছিল। মরিয়ম মান্নান বিভিন্ন সময় ওই প্রতিবেশীদের নামে জমি নিয়ে মামলা দিয়েছেন আর প্রতিবেশীরা প্রতিবার নথিপত্র জমা দিয়েই বেরিয়ে গেছেন। সর্বশেষ প্রতিবেশীদের ফাঁসাতেই ওই নাটক করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তিনি বলেন, মরিয়ম মান্নান ও তাঁর মা এবং বাদীকে বিভিন্ন সময় জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তাঁরা কোনো কথা বলছেন না। রহিমা বেগম শুধু একটা কথাই বলছেন, ‘তিনি অপহৃত হয়েছিলেন’। এর বাইরে আর কোনো কথা জিজ্ঞাসা করলেই তিনি চুপ করে থাকছেন আর কোনো কথা বলছেন না। এসব কারণে তদন্তে কিছু বিষয় অজানা রয়ে গেছে। তবে রহিমা বেগম নিখোঁজের ঘটনাটি যে পরিকল্পিত ছিল, তা বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ দিয়ে তদন্তে তুলে ধরা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে রহিমা বেগমের ছেলে মিরাজ ও দ্বিতীয় স্বামী বেলাল হাওলাদার আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দিও দিয়েছেন।