দীর্ঘ পাঁচ বছর পর আগামীকাল রোববার রাজশাহীতে আসছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি ১ হাজার ৩১৬ কোটি ৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকার প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করবেন। সেই সঙ্গে বিকেলে মাদ্রাসা মাঠে (বর্তমানে হাজী মুহম্মদ মুহসীন সরকারি উচ্চবিদ্যালয় মাঠে) জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে পুরো রাজশাহীতে এখন সাজ সাজ রব। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে মোট ৩১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে ২৫টির কাজ শেষ হয়েছে। আর ৬টির কাজ চলমান। তাঁদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রী আরও কিছু প্রকল্প ঘোষণা করতে পারেন। কারণ, রাজশাহীতে উন্নয়ন হলেও সেভাবে কর্মসংস্থান এখনো তৈরি হয়নি। সামনে জাতীয় নির্বাচন। এ উপলক্ষে নেতাদের দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি ভোট চাইবেন। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলের আরও উন্নয়ন করার জন্য তিনি অঙ্গীকার করবেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজামান লিটন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী রাজশাহী অঞ্চলের মানুষের জন্য অনেক কিছু করেছেন। রাজশাহীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী হাতভরে দিয়েছেন। তাঁরা এবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে কিছুই চাইবেন না। তাঁকে রাজশাহীবাসী কৃতজ্ঞতা জানাবে।
আওয়ামী লীগ ও সরকারি সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীতে ১ হাজার ৩১৬ কোটি ৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকার প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করবেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি নির্মাণ (৫ কোটি টাকা), শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মাণ (৪ কোটি), মোহনপুর রেলক্রসিংয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ (প্রায় ৪১ কোটি), ভদ্রা মোড় রেলক্রসিং থেকে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত চার লেনের সড়ক ও বিভাজক নির্মাণ (প্রায় ৫৬ কোটি), বন্ধ গেট-সিটি বাইপাস পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ চারলেন সড়ক ও বিভাজক নির্মাণ (প্রায় ৪৫ কোটি), হাই–টেক পার্ক থেকে ঢালুর মোড় পর্যন্ত কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ (১৩ কোটি), কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী সড়ক প্রশস্ত করা ও উন্নয়নকাজ (১৩১ কোটি), পুঠিয়া-বাগমারা মহাসড়ক প্রশস্ত ও উন্নয়ন (প্রায় ১১৭ কোটি), রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ষষ্ঠ থেকে দশম তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ (১০ কোটি), রাজশাহী মহানগর পুলিশের সদর দপ্তর নির্মাণ (প্রায় ২১ কোটি), রাজশাহী ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ভবন প্রকল্প (১৪ কোটি), ‘৪০টি উপজেলায় ৪০টি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় একটি কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপন (২২ কোটি), রাজশাহী সরকারি শিশু হাসপাতাল (প্রায় ২৩ কোটি), রাজশাহী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ (১৫ কোটি), রাজশাহী সমাজসেবা কমপ্লেক্স নির্মাণ (প্রায় ১৩ কোটি), রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের ছয়তলা দ্বিতল ছাত্রীনিবাস নির্মাণ (৫ কোটি), চারঘাট টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন নির্মাণ (১৭ কোটি), রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহুমুখী ভবন নির্মাণ (প্রায় ৯ কোটি), রাজশাহী সিভিল সার্জন কার্যালয় নির্মাণ (৪ কোটি), চারঘাট ও বাঘায় পদ্মা নদীর বাঁ তীর সংরক্ষণ প্রকল্প (প্রায় ৩৫০ কোটি), চারঘাট-বাঘায় ভূমি পুনরুদ্ধার ও নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য পদ্মা খনন প্রকল্প (প্রায় ৩৪৫ কোটি), তানোরে সড়ক নির্মাণ (২১ কোটি), বাগমারার ভবানীগঞ্জ-কেশরহাট সড়ক নির্মাণ (২২ কোটি), রাজশাহী পিটিআইয়ের তিনতলা বহুমুখী মিলনায়তন নির্মাণ (প্রায় ৯ কোটি) এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রকল্প নির্মাণ ( প্রায় ৩ কোটি)।
এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী রাজশাহীর ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। ছয়টির প্রকল্প ব্যয় ৩৭৬ কোটি ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। এগুলো হচ্ছে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী তথ্য কমপ্লেক্স ভবন, আট কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী আঞ্চলিক পিএসসি অফিস ভবন নির্মাণ, ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ তলা ভবন নির্মাণ, ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদ জননী জাহানার ইমাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ তলা ভবন নির্মাণ, ১৬৩ কোটি দশমিক ৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণ, ৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ।
সফরসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী রোববার সকাল ১০টায় রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী অভিবাদন গ্রহণ করবেন। একই সময়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারীদের মধ্যে পদক বিতরণ করবেন। পরে তিনি সেখানে ভাষণ দেবেন। বিকেলে তিনি রাজশাহী নগরের মাদ্রাসা মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ভাষণ দেবেন।