বিশেষ পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের মূল্যবৃদ্ধির ক্ষমতা সরকারের হাতে রাখতে জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (সংশোধন) আইন-২০২৩’ নামে একটি বিল উত্থাপিত হয়েছে। বর্তমান প্রক্রিয়ায় ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে গণশুনানি করে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ট্যারিফ সমন্বয় (মূল্যবৃদ্ধিতে) এবং প্রচলিত আইনে বর্ণিত প্রক্রিয়ায় মূল্য নির্ধারণে ন্যূনতম তিন মাস সময় লাগে। তাই দ্রুততম সময়ে ট্যারিফ সমন্বয়ের (মূল্যবৃদ্ধির) লক্ষ্যে সরকারের ক্ষমতা সংক্ষণের জন্য আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব আনা হয়েছে।
আজ রবিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে বিলটি উত্থাপন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। কমিটিকে পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিলটি উত্থাপনের আগে আপত্তি জানান জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, এই বিলটি আনা হলে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির দাম আরো বাড়বে। তার প্রতিক্রিয়ায় বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। এতে বাড়বে জনদুর্ভোগ। কমবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের ক্ষমতা ও মূল্য সমন্বয়ে জনগণের অধিকার।
জবাবে ট্যারিফ কমিশনের মাধ্যমে দীর্ঘসূত্রতার তিক্ত অভিজ্ঞতার উল্লেখ করে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মূল্য সমন্বয়ের যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তা বাস্তবায়ন হয়েছে ২২ সালের অক্টোবরে। এর মধ্যে বিশ্ববাজারে আরো মূল্যবৃদ্ধি ঘটলেও তা সমন্বয় করতে রাজি হয়নি কমিশন। এতে ভর্তুকি বেড়েছে। এভাবে ভর্তুকি দিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পাশ্বর্বর্তী কোনো দেশ গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি দেয় না। তাই অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখতে ও ভর্তুকি কমাতে দ্রুততম সময়ে ট্যারিফ সমন্বয়ের জন্য বিলটি আনা হয়েছে।
এরপর বিলটি উত্থাপনে জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমামের আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
উল্লেখ্য, ২০০৩ সালে প্রণীত বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনটি এর মধ্যে তিনবার সংশোধন হয়েছে। প্রথম সংশোধনী গৃহীত হয় ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় সংশোধনী গৃহীত হয় ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এবং ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর। বিলে বিদ্যমান আইনের ৩৪ ধারার (ক) উপ-ধারা (৩) এর সংশোধনী এনে বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, কমিশন কর্তৃক প্রবিধানমালা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারিবে।’
এ ছাড়া বিলের ৩৪ক ধারা সংশোধন করে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয়ে সরকারের ক্ষমতা : সংযোজন করে বলা হয়েছে, ‘এই আইনের অন্যান্য বিধানে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে, জনস্বার্থে, কৃষি, শিল্প, সার, ব্যবসা-বাণিজ্য ও গৃহস্থালী কাজের চাহিদা অনুযায়ী এনার্জির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করিবার লক্ষ্যে উহাদের উৎপাদন বৃদ্ধি, সঞ্চালন, পরিবহন ও বিপণনের নিমিত্ত দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিদ্যুৎ উৎপাদন, এনার্জি সঞ্চালন, মজুদকরণ, বিপণন, সরবরাহ, বিতরণ এবং ভোক্তা পর্যায়ে ট্যারিফ নির্ধারণ, পুনঃনির্ধারণ বা সমন্বয় করিতে পারিবে।’
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতি বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রাখিয়া বিদ্যুৎ, গ্যাস ও তেলের ট্যারিফ সমন্বয় করা প্রয়োজন। অর্থনীতির গতিকে চলমান রাখিবার স্বার্থে নিয়মিত ও দ্রুততম সময়ে ট্যারিফ সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিইআরসির পাশাপাশি সরকারের ক্ষমতা সংক্ষণের জন্য আইনটি সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। বিষয়টি জরুরি বিবেচনায়, বর্ণিত বিষয়ে আশু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে।’