দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের আওতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামীকাল। রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে ভার্চুয়ালি মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ রবিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনায় ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে দ্বিতীয় পর্যায়ের ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
লিখিত বক্তব্যে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলামী মূল্যবোধের উন্নয়ন এবং ইসলামী সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সরকার দেশীয় অর্থায়নে একসাথে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে। আগামীকাল দ্বিতীয় পর্যায়ের ৫০টি মডেল মসজিদের উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক মসজিদ রয়েছে। এসব মসজিদের সিংহভাগই স্থানীয় জনগণের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আধুনিক সুবিধাসংবলিত দৃষ্টিনন্দন মসজিদ বা ইসলামী স্থাপনা নেই বললেই চলে। এসব বিবেচনায় বর্তমান সরকার ইসলামী মূল্যবোধের উন্নয়ন এবং ইসলামী সংস্কৃতি বিকাশের উদ্দেশে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করে।’
দ্বিতীয় পর্যায়ের মসজিদগুলোর মধ্যে জামালপুরের জেলা সদর, বকশীগঞ্জ, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী, মাদারগঞ্জে পাঁচটি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করা হবে। এ ছাড়া ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও নগরকান্দা, গাজীপুরের কাপাসিয়া, গোপালগঞ্জ সদর, কিশোরগঞ্জ সদর ও কটিয়াদী, মানিকগঞ্জের ঘিওর ও সাটুরিয়া, নরসিংদী সদর ও মনোহরদী, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, শরীয়তপুরের জেলা সদর ও ভেদরগঞ্জ, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, রাজশাহী সদর উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা, বগুড়ার ধুনট, বগুড়া ও নন্দিগ্রাম, নওগাঁর নিয়ামতপুর, নাটোরের বড়াইগ্রাম, পাবনার ভাঙ্গুড়া ও সুজানগর, সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, রংপুরের গংগাচড়া ও কাউনিয়া, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা, শেরপুর সদর উপজেলা, ভোলার লালমোহন ও তজুমদ্দিন, পিরোজপুর জেলা সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর ও কসবা, খাগড়াছড়ি সদর ও মানিকছড়ি, মেহেরপুর সদর ও গাংনী, সাতক্ষীরার দেবহাটা, সিলেটের গোয়াইনঘাট, সুনামগঞ্জ সদর ও জগন্নাথপুর, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, কুমিল্লার চান্দিনা ও চৌদ্দগ্রাম, কুষ্টিয়ার খোকসা ও ভেড়ামারা এবং খুলনার রূপসায় বাকি ৪৬টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হবে।
নির্মিত প্রতিটি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ৪৩ শতাংশ জায়গার ওপর তিন ক্যাটাগরিতে নির্মিত হচ্ছে। এর মধ্যে জেলা ও সিটি করপোরেশন পর্যায়ে চারতলা, উপজেলা পর্যায়ে তিনতলা এবং উপকূলীয় এলাকায় চারতলা মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহর ও তিনটি সিটি করপোরেশনে ৫টিসহ মোট ৬৯টি চারতলা বিশিষ্ট মডেল মসজিদ ও ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। বি-ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৯টি (নবগঠিত চারটি উপজেলাসহ) এবং সি-ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় চারতলাবিশিষ্ট (নিচতলা ফাঁকা থাকবে) ১৬টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। মসজিদগুলোতে নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক অজু ও নামাজ কক্ষ, ইমাম প্রশিক্ষণকেন্দ্র, হেফজখানা, গণশিক্ষা কেন্দ্র, গবেষণাকেন্দ্র, পাঠাগার, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশনা প্রদান করেন। এরপর মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রথম পর্যায়ে গত ১০ জুন ২০২১ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের শুভ উদ্বোধন করেন। আগামীকাল দ্বিতীয় পর্যায়ের আরো ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করবেন।