দেশের হাওর ও উপকূলে অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণের ফলে বন্যা ও জলাবদ্ধতার সমস্যা বাড়ছে। তাই উন্নয়ন প্রকল্প করার ক্ষেত্রে নদী-জলাশয় ও হাওরের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে মাথায় রাখতে হবে। এতে দেশের উন্নয়ন টেকসই হবে ও জনগণের ভোগান্তি হবে না।
আজ সকালে শুরু হওয়া বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্কের (বেন) আয়োজনে বার্ষিক সম্মেলনে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী মোতাহার হোসেন ভবন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘বাংলাদেশের হাওর, নদী ও বিল: সমস্যা ও প্রতিকার’। বিকেলে সমাপনী অধিবেশন শেষে সম্মেলনের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে।
সম্মেলনের কারিগরি অধিবেশন শুরুর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি হাওরে এখন থেকে আর কোনো রাস্তা নির্মাণ করা হবে না উল্লেখ করে বলেন, সেখানকার ভূমিরূপ ও প্রতিবেশব্যবস্থাকে মাথায় রেখে সরকার একটি উড়ালসড়ক নির্মাণ করছে। আরেকটি উড়ালসড়কও নির্মাণ করা হবে। সরকার পরিবেশ ধ্বংস করে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প করবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা টেকসই উন্নয়নে বিশ্বাসী, যা পরিবেশ রক্ষা করে করা হবে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান বলেন, ‘হাওরে রাস্তা নির্মাণের আগে আমরা গবেষণা করে দেখিয়েছিলাম ওই রাস্তার অন্তত ৩০ শতাংশ এলাকা কালভার্ট ও সেতু নির্মাণের মাধ্যমে ফাঁকা রাখতে হবে। নয়তো উজানে বৃষ্টি শুরু হলে তা ওই রাস্তায় আটকে গিয়ে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র হবে। কিন্তু দেখা গেছে মাত্র আড়াই শতাংশ জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। অন্যদিকে হাওর এলাকার বৃষ্টিপাতের দীর্ঘমেয়াদি তথ্য পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে সেখানে আগে মে মাসে বেশি বৃষ্টি হতো। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগেভাগে সেখানকার একমাত্র ফসল বোরো ধান পেকে যেত। ফলে কৃষকের ক্ষতি হতো না। এখন এপ্রিলে বৃষ্টি বাড়ছে। ফলে ধান পাকার আগে বন্যা এসে তা ডুবিয়ে দিচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মুজিবর রহমান হাওলাদার বলেন, দেশের নদ-নদীগুলোর দখলদারদের চিহ্নিত করে নদী রক্ষা কমিশন তালিকা প্রকাশ করেছে। এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ওই তালিকা অনুযায়ী দখলদারদের উচ্ছেদ করা। যাতে নদীগুলো তাদের স্বাভাবিক প্রবাহে চলতে পারে।
বেনের প্রতিষ্ঠাতা ও বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় একসময় অষ্টমাসি বাঁধব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। মাসের আট মাস বাঁধ দিয়ে ফসল করা হতো, বাকি সময় তা কেটে দিয়ে পানি প্রবেশ করতে দেওয়া হতো। কিন্তু বিদেশি পরামর্শকদের বুদ্ধিতে সরকার উপকূলজুড়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করেছে। যার ফলাফল হিসেবে আজকে দেশের উপকূলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, ‘ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে যেসব খাল রয়েছে, তা উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আরও সরু করা হয়েছে। তার চারপাশে দখলদারদের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। হাওরের দখল ও দূষণ বন্ধ করতে না পারলে আমাদের রাজধানীসহ বড় শহরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।’