1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : স্টাফ রিপোর্টার : স্টাফ রিপোর্টার
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
‘গণঅভ্যুত্থানে আহতদের আমৃত্যু চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে’ বরিশাল থেকে ধরে আনা কর্মকর্তাকে ঢাকার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ হাজী সেলিমের ছেলে সাবেক এমপি সোলাইমান গ্রেপ্তার আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন: ড. ইউনূস আইন করে কুইক রেন্টালে দায়মুক্তি দেয়া অবৈধ ছিল : হাইকোর্টের রায় শেয়ারবাজারে কারসাজিতে সাকিবের আয় ৯০ লাখ, জরিমানা হয়েছে ৫০ লাখ বিদ্যুৎ নিয়ে আদানি গ্রুপের সঙ্গে সব চুক্তি বাতিল চেয়ে রিট বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েই যাচ্ছে ভারত: মির্জা ফখরুল নাহিদ-আসিফরা জীবন দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই নেমেছিল: সারজিস বাংলাদেশিদের ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ দেবে আল-আজহার

৩৫ বছর পর হাসিনা ফিরে পেলেন ‘আপন ঠিকানা’

রিপোর্টার
  • আপডেট : বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

হাসিনা আক্তারের বছর তখন পাঁচ কি ছয়। কথা না শোনায় মায়ের মার খেয়ে বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে। প্রায়ই রাগ করে নিজেদের বাড়ি থেকে খানিক দূরের দাদুর বাড়িতে গেলেও সেদিন চলে যান সোজা লঞ্চ ঘাটে। ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার গঙ্গাপুর গ্রামে দাদুর বাড়ির পাশেই ছিল লঞ্চ ঘাটটি। এক পর্যায়ে সেখানকার লঞ্চ তাকে ভিড়ায় রাজধানীর সদরঘাটে। কীভাবে ফিরবেন বাড়ি, এই ভেবে একটি দোকানের সামনে বসে অঝোরে কাঁদতে থাকেন হাসিনা।

সেই সময় দৃশ্যটি চোখে পড়ে কেরানীগঞ্জের বরিশুর বাজার কালন্দী গ্রামের হাসেম উদ্দিন নামে এক বৃদ্ধের। ঠিকানা বলতে না পারা শিশু হাসিনাকে কাছে টেনে নেন হাসেম। পরে তাকে নিয়ে যান বাড়িতে। হাসেম উদ্দিন নিজের সন্তানের মতোই তাকে লালন-পালন করতে থাকেন। আর নিজের পরিবার হারিয়ে আরেক পরিবারে বড় হতে থাকেন হাসিনা।

এভাবেই কেটে গেছে প্রায় ৩৫ টি বছর। হারিয়ে যাওয়া হাসিনা আক্তার (৪০) এখন ছয় সন্তানের জননী। তবে স্বপ্ন ছিল কোনো একদিন ফিরে পাবেন নিজের পরিবারকে। সেই স্বপ্নের পথে পা বাড়িয়ে ৯ মাস আগে যান স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লিমিটেডের ‘আপন ঠিকানা’ অনুষ্ঠানে। জনপ্রিয় আরজে গোলাম কিবরিয়া সরকারের উপস্থাপনায় সেই অনুষ্ঠানে খুলে বলেন হারিয়ে যাওয়ার ‘করুণ’ গল্প।

এরপর আশায় দিন গুণতে থাকেন হাসিনা। এখানেও কেটে যায় আরও নয় মাস। ভেবেছিলেন এই চেষ্টাও বুঝি বিফল। তবে বাস্তবতা যে নাটকের চেয়েও নাটকীয়। অপেক্ষার প্রহর শেষে সপ্তাহ খানেক আগে মিলে তার পরিবারের সন্ধান। ‘আপন ঠিকানা’র আপডেট অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই ৩৫ বছর পর বৃদ্ধ বাবা খোরশেদ, মা মরিয়ম আর হাসিনার আনন্দাশ্রুতে হয়েছে তাদের মিলন।

আরজে কিবরিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড হওয়া ১৪৬ নম্বর পর্বের আপডেট ভিডিওতে দেখা যায়, মেয়ের খোঁজ পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটে আসেন খোরশেদ আলম ও তার স্ত্রী মরিয়ম আক্তার। পরিচয় নিশ্চিত করতে স্টুডিওতে হাসিনার কাছে প্রথমে আনা হয় মা মরিয়মকে। বিভিন্ন ঘটনা মনে করে তা মেলাতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে হাসিনার থুতনিতে থাকা ছোটবেলার একটি কাটা দাগের ঘটনার মাধ্যমেই হাসিনা নিশ্চিত হন এটিই তার পরিবার। পরে বাবা খুরশিদ আলমকে স্টোডিওতে আনা হলে শুরু হয় তিনজনের কথোপকথন। আলাপচারিতায় তিনজনেই ফিরে যান ৩৫ বছর আগে। সেই সাথে ৩৫ বছরে জমা থাকা কথাগুলো যেন বলতে থাকেন তারা। বাবা-মা-মেয়ের দীর্ঘক্ষণ আলাপচারিতার মাঝে কোনো কথা বলার ফুরসত না পেয়ে আরজে কিবরিয়া বলে উঠেন- ‘আজকে আমার চান্স নেই!’।

এরপর গত সোমবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে বাবা খোরশেদ আলম মেয়েকে দেখতে ছুটে যান হাসিনার স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার অরণ্যপাশা গ্রামে। মেয়েকে কাছে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে খোরশেদ আলম।

জানা যায়, ১৪ বছর বয়সে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের অরণ্যপাশা গ্রামের ফজলুর রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয় হাসিনার। বিয়ের পরপরই মারা যায় তাকে লালনপালন করা বাবা-মা। এরই মধ্যে হাসিনা হন চার মেয়ে আর দুই ছেলের মা। সংসারের ব্যস্ততায় কেটে যাচ্ছিল তার দিন। মোবাইলে আপন ঠিকানার ভিডিও দেখে বড় মেয়ের কথায় একদিন ছুটে যান সেই স্টুডিওতে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বেসিক ভিডিও প্রচার হওয়ার প্রায় ১০ মাসের মাথায় বাবা-মায়ের বুকে ফিরেন হারিয়ে যাওয়া সেই হাসিনা।

হাসিনা আক্তার বলেন, ছোট বেলায় নিজের মা-বাবাকে হারিয়েছি। তাদের আদরসহ অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয়েছি। যদিও যারা আমাকে আশ্রয় দিয়েছেন তারাও নিজের সন্তানের মত করেই আমাকে বড় করেছেন। তবুও নিজের বাবা-মায়ের কথা খুব মনে পরতো৷ বিয়ের পর অনেকের কাছ থেকেই কটুকথা শুনতে হত। ‘আমার জন্মের পরিচয় ঠিক নাই’- এমন কথাও কেউ কেউ বলেছে। তখন কষ্ট লাগলেও ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। তবে সবসময়ই মনে হতো আমার বাবা-মা বেঁচে আছেন এখনো।

তিনি আরও বলেন, যারা আমাকে বড় করেছেন, আমার বিয়ের পর তারাও মারা যান। আমার সন্তানেরা সবসময়ই তাদের নানাবাড়ি যেতে চাইতো। আমি তাদের জন্য হলেও আমার পরিবার ফিরে পেতে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করতাম। আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেছেন। আপন ঠিকানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি আমার পরিবারকে ফিরে পেয়েছে। আমার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে।

হাসিনার বাবা খোরশেদ আলম বলেন, মেয়েকে হারানোর পর অনেক খোঁজাখুঁজি করেছি। আল্লাহর কাছে প্রতিদিনই চাইতাম যেন মেয়েকে ফিরে পাই। শেষ বয়সে এসে মেয়েকে পেলাম। আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া। মেয়ের পরিবারের সবাইকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যাব।

হাসিনার স্বামী ফজলুর রহমান বলেন, সবকিছু জেনে শুনেই হাসিনাকে বিয়ে করেছি। ধারণা ছিল না যে সে তার পরিবার ফিরে পাবে। তবে আল্লাহ চাইলে সবই সম্ভব। আল্লাহর ইচ্ছাতেই আজ এমন খুশির দিন পেলাম আমরা।

আরজে গোলাম কিবরিয়া সরকার বলেন, এই সফল পর্বটির মাধ্যমে আমরা কিছু সহজ সরল মানুষকে দেখেছি। হাসিনারা ভালো থাকুক এই প্রত্যাশাই করছি। আমাদের চাওয়া, আমাদের এই কাজ অনবরত চলতে থাকুক। যতক্ষণ না, হারিয়ে যাওয়া একটা ছেলেমেয়েও পরিবারে ফেরানোর সম্ভবনা আছে।

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২৩