বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পেছনে ম্যানেজম্যান্টের ব্যর্থতা দায়ী। দায়ীদের চাকরিচ্যুত করা হবে। এরই অংশ হিসেবে আগামী রবিবার (১৬ অক্টোবর) বেশ কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করার কথাও বলেছেন প্রতিমন্ত্রী।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) রাতে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ নামে এক আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। চলমান লোডশেডিং ও গ্যাস সংকট নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন।
ডয়েচে ভেলের ওয়েবসাইট ও ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমাদের যে ব্ল্যাকআউটটা হয়েছিল, সেটা পিজিসিবি তার ম্যানেজমেন্ট করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল, সে কারণেই হয়েছে। সেদিন ডিমান্ড উৎপাদনের চেয়ে বেশি ছিল। তাদের ডেসকো থেকে বলা হয়েছিল যে, তোমরা কাট ডাউন কর। নইলে বাধাগ্রস্ত হবে, ফ্রিকোয়েন্সি আরও উপরে উঠে গিয়ে ক্র্যাশ করবে। বাস্তবেও তাই হয়েছে। ওরা কথাটা শোনেনি, কন্টিনিউ করেছে, একপর্যায়ে ব্ল্যাকআউট হয়েছে।’
এ ঘটনায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন কোম্পানি পিজিসিবি কর্মকর্তাদের দায় রয়েছে বলে জানান নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করেছি, যারা কথাগুলো শোনার চেষ্টা করেননি। এদের আমরা স্যাক করবো। আগামী রবিবারের মধ্যেই ব্যবস্থা নেবো। এটা কোনো টেকনিক্যাল ফল্ট ছিল না, ম্যান ম্যানেজমেন্টের ফল্ট ছিল’।
প্রতিমন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন, অক্টোবরে আর বিদ্যুৎ সংকট থাকবে না। বিষয়টি সঞ্চালক অবতারণা করলে তিনি বলেন, ওইদিনের (৪ অক্টোবর) বিপর্যয়ের কারণে সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত না হলে বর্তমানে বিদ্যুতের লোড শেডিং-এর কোনো সমস্যাই থাকতো না।
এ দাবির ব্যাখ্যায় প্রতিমন্ত্রী অনুষ্ঠান চলার সময়ের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমার মোবাইলে প্রতি ঘণ্টায় বিদ্যুতের চাহিদা এবং উৎপাদনের একটি ডাটা আসে। আমি এই মুহূর্তে যখন কথা বলছি, এখনও ৫০০ মেগাওয়াট লোড শেড চলছে। কিন্তু ওয়েস্টার্ন ব্লক থেকে যদি ৭০০ মেগাওয়াট নিয়ে আসতে পারতাম তাহলে লোড শেডিং থাকতো না।’
কী কারণে ওয়েস্টার্ন ব্লক থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আনা যাচ্ছে না- এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘এটা হচ্ছে ঘোড়াশাল গ্রিড উপকেন্দ্রে ম্যানফল্ট বা আমি মনে করি হিউম্যান ফল্টের কারণে। আমরা আজকেও এটা নিয়ে ন্যাশনাল লোড ডিসপাস সেন্টারে বসেছিলাম।’
গত ৪ অক্টোবর বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্ল্যাক আউটের ঘটনা ঘটে। দুপুর ২টা ৪ মিনিটে বিদ্যুৎ চলে যায়। শুরুতে অনেকেই ভেবেছিলেন সাধারণ লোডশেডিং। কিন্তু সময় গড়াতে জানা যায়, বড় রকমের ব্ল্যাকআউটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের অর্ধেক অঞ্চল।
টানা ৬-৭ ঘণ্টা অন্ধকারে ছিল ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও এর আশপাশের এলাকার কয়েক কোটি মানুষ। এর আগে ২০১৪ সালের নভেম্বরে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২ ঘণ্টার ব্ল্যাকআউট হয়।