আজ রোববার দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ ( জি এম) কাদেরের সঙ্গে ময়মনসিংহ জেলা কমিটি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মতবিনিময় সভা চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে নেই। কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব হতে পারে, কিন্তু জাতীয় পার্টি কারও দাসত্ব করবে না। আমরা দেশের মানুষের পক্ষে কথা বলি, আমরা দেশের মঙ্গলের জন্য রাজনীতি করি। আমাদের রাজনীতি দেখে অনেকেই মনে করছেন, আমরা অন্য কারও সঙ্গে হাত মিলিয়েছি। আমরা আসলে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করছি। কারও সঙ্গে নাকে খত দিয়ে রাজনীতি করব না। কারও দালালি করতে জাতীয় পার্টির রাজনীতি নয়।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ময়মনসিংহ বিভাগীয় জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব ফখরুল ইমাম আজকের সভায় সভাপতিত্ব করেন। এ সময় ময়মনসিংহের প্রতিটি উপজেলার নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। তাঁরা জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। জাতীয় পার্টির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের জন্মস্থান ময়মনসিংহ। রওশন এরশাদ ময়মনসিংহ-৪ আসনের সংসদ সদস্যও।
ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদ গত ৩০ আগস্ট হঠাৎ গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে ২৬ নভেম্বর জাতীয় পার্টির সম্মেলন আহ্বান করে একটি প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করেন। এরপর রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহসহ দলের কিছু বহিষ্কৃত, অব্যাহতি পাওয়া এবং দলীয় পদ হারানো নেতা তৎপর হন। এ নিয়ে দলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম (সভাপতিমণ্ডলী) ও সংসদ সদস্যদের যৌথ সভা হয়। সভায় সম্মেলন ডেকে দলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য রওশন এরশাদ ও তাঁর ছেলে সাদ এরশাদকে ‘সতর্ক’ করার সিদ্ধান্ত হয়।
অনুষ্ঠানে জি এম কাদের বলেন, ‘বড় গাছের ছায়াতলে থাকলে ছোট গাছ বেড়ে উঠতে পারে না। বড় গাছের ছায়াতলে না থাকলে ঝড়ঝঞ্ঝা আসে, তা মোকাবিলা করেই দাঁড়াতে হয়। জাতীয় পার্টি কারও ছায়াতলে যাবে না। তাই ঝড়ঝঞ্ঝা আসবে। আমরা সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়ে তুলব। কারও ছায়াতলে থেকে, কারও দালালি অথবা চাকর হয়ে রাজনীতি করলে সম্মান পাওয়া যায় না। আমরা সম্মানের জন্য রাজনীতি করছি। টাকার জন্য ব্যবসা করা যায়, ঘুষ খাওয়া যায়, কিন্তু রাজনীতি করা উচিত নয়।’
জি এম কাদের আরও বলেন, ‘আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। আমরা মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচনের বিরোধিতা করছি। আমরা মনে করি, ইভিএমে কারচুপির সুযোগ আছে। ইভিএমে কারচুপি করে ফলাফল ঘোষণা করা হলে চ্যালেঞ্জ করা যায় না।’
সভাপতির বক্তৃতায় ফখরুল ইমাম বলেন, জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ। জাতীয় পার্টিতে কারও বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ নেই। রওশন এরশাদ ৯ মাস ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তাঁর পক্ষে জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব বা কাউন্সিল করা সম্ভব নয়।
এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য সালাহউদ্দিন মুক্তি বলেন, ‘রওশন এরশাদের ভুল সিদ্ধান্তে জাতীয় পার্টি ধ্বংস হয়ে যাবে, আমরা তা মেনে নেব না। ময়মনসিংহে জাতীয় পার্টির ৯৯ দশমিক শূন্য ৯ ভাগ নেতা-কর্মী জি এম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আমরা হামলা-মামলায় ভয় পাই না, আমরা কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেব না।’