বরগুনা সদর হাসপাতালে ২৫০ শয্যা চালু করার জন্য সাততলা ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে তিন মাস আগে। কিন্তু জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ না করায় ২৫০ শয্যার সেবা চালু করা সম্ভব হয়নি। উপরন্তু বিদ্যমান ১০০ শয্যার জনবলকাঠামো অনুযায়ীই এখানে চিকিৎসক নেই। এ কারণে এখানে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া এখানে শয্যার চেয়ে দেড় থেকে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হন। ফলে অনেক রোগীকে মেঝে অথবা বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহরাব উদ্দীন বলেন, ‘২৫০ শয্যার হাসপাতাল চালুর জন্য আমরা প্রতি মাসে জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জাম চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণলায় চাহিদাপত্র পাঠাচ্ছি। ইতিমধ্যে জনবল অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু হয়নি। এ চিকিৎসা সরঞ্জাম এখনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। এ বিষয় চিঠি চালাচালি চলছে। এসব পেতে এক বছরও লাগতে পারে। আবার অল্প সময়ের মধ্যে চিকিৎসা সরঞ্জাম আসতে পারে।’
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে ৫০ শয্যার এই হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। ২০১০ সালের হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর এখানে সাততলা একটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালে নতুন ভবনটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর বরগুনায় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা গত বছর জুনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে এই ভবন হস্তান্তর করেন। কিন্তু জনবল নিয়োগ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ না করায় ২৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০০ শয্যার হাসপাতালের জনবলকাঠামো অনুযায়ী বরগুনা সদর হাসপাতালে ৪৩ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে এখানে মাত্র ১১ জন কর্মরত আছেন। এঁরা হলেন তত্ত্বাবধায়ক, একজন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও), হোমিও চিকিৎসক, চারজন চিকিৎসা কর্মকর্তা, সার্জারি ও অ্যানেসথেসিয়া, গাইনি ও অর্থোপেডিকস বিভাগের চারজন জুনিয়র কনসালট্যান্ট।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তরের বরগুনা কার্যক্রম নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে গণপূর্ত বিভাগের অধীনে হাসপাতালের নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এ জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩১ কোটি ৩১ লাখ ৪৩ হাজার ৫৭৭ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আবদুল খালেক এন্টারপ্রাইজকে ভবন নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেয়। কাজ শেষ হওয়ার পর ২০২১ সালের জুন মাসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভবনটি বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ১০০ শয্যার হাসপাতালে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ২০০ জন রোগী ভর্তি থাকে। শয্যাসংকটের কারণে হাসপাতালের ওয়ার্ডের মেঝেতে, বারান্দায়, হাসপাতালে প্রবেশদ্ধারে রোগীদের শয্যা করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া চিকিৎসক–সংকটের কারণে সেবাপ্রত্যাশী রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শয্যাসংকটের কারণে হাসপাতাল ভবনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেঝেতে, বিছানা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নতুন ভবনটিতে নিচতলার একটি অংশে করোনার টিকা প্রদান করা হয় এবং দ্বিতীয়তলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য ৫০ শয্যার একটি ইউনিট রয়েছে।
বরগুনা সদরের মাইঠা গ্রামের আবদুল কাদের (৫০) বলেন, ‘শয্যাসংকটের কারণে রোগীদের ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় রেখে সেবা দেওয়া হচ্ছে। কত বড় একটা নতুন বিল্ডিং পইড়া আছে, ওইটা চালু করা হলে আমাদের আর এই রকম নিচে বিছানা করে চিকিৎসা নিতে হতো না।’
শয্যাসংকটের কারণে সমস্যা হওয়ার কথা স্বীকার করে সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহরাব উদ্দীন বলেন, নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু হলে আর শয্যাসংকট থাকবে না। তবে এখন শয্যাসংকটের কারণে রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া যাচ্ছে না।